মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রিফাত ও ভাইরালের অসুস্থ প্রতিযোগিতা | আপন নিউজ

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন

প্রধান সংবাদ
গলাচিপা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে সভাপতি আতিক, সম্পাদক রায়হান; প্রভাতি জনকল্যাণ সংস্থা’র পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন আমতলীতে সৌদি রিয়াল প্র’তা’র’না চক্রের পাঁচ সদস্য গ্রে’প্তা’র কলাপাড়ায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ইউপি সদস্য সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা কলাপাড়ায় গরুতে ঘাস খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব; দুজনকে কু’পি’য়ে জ’খ’ম করার অভিযোগ। কলাপাড়ায় প্রান্তিক কৃষকের মাঝে রাসায়নিক সার ও বীজ বিতরণ আমতলীতে হতদরিদ্র পেল উপহারের ঘর কলাপাড়ায় তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন বিতরণ কলাপাড়ায় পানিতে ডুবে দুই শি’শু’র মৃ’ত্যু ’উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে ভয় ভীতিহীন, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর নির্বাচন’ -দুর্যোগ ও ত্রান প্রতিমন্ত্রী
মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রিফাত ও ভাইরালের অসুস্থ প্রতিযোগিতা

মাদ্রাসা শিক্ষার্থী রিফাত ও ভাইরালের অসুস্থ প্রতিযোগিতা

মোঃ বেল্লাল হাওলাদার: বেশ কয়েকদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি ভিডিও। জামালগঞ্জ উপজেলার লম্বাবাঁক নূরানী মাদ্রাসার শিক্ষক তার ৫ বছরের ছাত্র রিফাতকে প্রশ্ন করছেন জাতীয় মাছের নাম কি? উত্তরে সরল সহজ কোমলমতি শিক্ষার্থী আত্মবিশ্বাসী হয়ে সুউচ্চ কন্ঠে উত্তর দিয়েছেন পাঙ্গাস! যা দেখে নেট দুনিয়ায় বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। অনেকে নিজের আবেগের বসে চোখের পানি ফেলেছে আবার কেউ কেউ হাস্যরসাত্মক মন্তব্যও করেছে। তবে জেনে খুব ভালো লেগেছে ওই এলাকার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মানবিক হয়ে তাকে ইলিশ মাছ কিনেও উপহার দিয়েছে, যা নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবিদার। অনেকেই বলেছেন, মাদ্রাসায় পড়ুয়া “ছোট্ট রিফাত নির্মম সত্য কথাটাই বলেছে”। সে কথার ব্যাখা যদি দেই তাহলে সহজেই বুঝা যায় রিফাত জন্মের পর বুঝ হবার অর্থাৎ সব কিছু চেনার বয়স থেকেই দেখে আসছে বাড়িতে বাবা পাঙ্গাস মাছ কিনে আনছে। এমনকি যে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করছে সেখানেও পাঙ্গাস ছাড়া ইলিশ বা গরুর গোস্ত জুটে না। হয়তো সপ্তাহে একদিন ব্রয়লার মুরগি কপালে জুটলেও জুটতে পারে। এটা ঠিক প্রান্তিক এলাকার মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানে সরকার থেকে কোনো বাজেট পাওয়া যায় না বা দেওয়া হয়না। ধর্মীয় এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এলাকার সামান্য কিছু লোকের অনুদান পেলেও পেতে পারে, বাকি চলে অসহায় দরিদ্র রিফাতের মতো পরিবারের বেতনের টাকায়। তারমানে এই নয় যে, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা বাড়িতে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইলিশ মাছ বছরেও একবার খায়না।

যতটুকু জানতে পেরেছি রিফাতের বাবা একটি মুদি দোকানে কাজ করেন। বাবা গরীব হলেও ছেলে সন্তানের খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক, পরিবেশ- পরিচ্ছন্নতার প্রতি আলাদা যত্নশীল ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে থাকেন। রিফাত শৈশব বয়স আত্মভোলা হতে পারে। তার মানে এই নয় যে, সে জন্মের পর ইলিশ মাছ খায়নি। অবশ্যই খোঁজখবর নিলে জানা যাবে হয়তো ইলিশ মাছ খেয়েছে। এমনও হতে পারে সে জানে না যে, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। আমি মনে করি অবুঝ এই ছেলেটিকে শেখানো হয়নি জাতীয় মাছ ইলিশ। তাই তো সে বলেছে পাঙ্গাস আমাদের জাতীয় মাছ। তবে এটা ঠিক যে, বর্তমান বাজারের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে জাতীয় মাছ ইলিশ কেনার সামর্থ্য অনেকের নেই। দুঃখজনক হলেও এটাই কঠিন বাস্তবতা; শুধু রিফাতের বাবা কেন দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রতিনিয়ত ভাগ্যে হয় না ইলিশ মাছ কেনার। এমনি অনেক হতদরিদ্র পরিবার আছে যাদের পাঙ্গাস মাছ কেনারও সামর্থ্য নেই। কোনো মতে আলুভর্তা, ডিম, ডাল খেয়ে জীবন বাঁচে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

এর আগে প্রশ্ন করা হয়েছিল জাতীয় ফলের নাম কি? উত্তরে রিফাত বলেছে আঙ্গুল! এটাও ভুল উত্তর নিশ্চয়ই; এটা নিয়ে কারো তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। শিক্ষকের প্রশ্নের উত্তরে জাতীয় মাছ পাঙ্গাস বলায় অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে যা সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আমার কথা হলো রিফাত তো পেয়ারা বলতে পারতো তা- না বলে আঙ্গুল বলেছে কেন? গ্রাম-গঞ্জে প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় আম, জাম, কাঁঠাল, গাছ না থাকলেও অবশ্যই কলা গাছের পাশাপাশি পেয়ারা গাছ দেখা যায়। ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পেয়ারার সাথে বেশ পরিচিত। তাহলে পেয়ারা বললো না কেন? এখানে বুঝা যায় ছেলেটি অত্যন্ত সরল সহজ কোমলমতি শিক্ষার্থী নিশ্চয়ই আঙ্গুল ফলের সাথে তার পরিচয় আছে। আঙ্গুল কিন্তু ৫৫০/ টাকা প্রতি কেজি এখানে প্রমাণ করে রিফাত যেহেতু আঙ্গুল চিনেছে তাহলে অবশ্যই ইলিশ মাছের সাথে পরিচয় আছে বা খেয়েছে। পাঙ্গাস মাছ সাইজে অনেক বড় ভাবছে এটাই আমাদের জাতীয় মাছ হবে। ভালো মন্দ পরখ করার ক্ষমতা এখনও হয়নি তার। সে নাবালক শিশু। তাকে ব্যবহার করে তার শিক্ষক ভাইরাল হওয়ার মতো কাজ করছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি। ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রকে পাঠদান করা এটা সম্পূর্ণ দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেওয়া। আমি এটাকে ইতিবাচকভাবে নিতে পারিনি। এক শ্রেণির মানুষ যারা নিজের বুদ্ধি বিবেক বিবেচনা মানবিকতা বির্সজন দিয়ে দেশ, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সম্মানকে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিখেয়ে ভাইরাল হওয়ার অস্বস্তি প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তারমধ্যে রিফাতের শিক্ষক পড়ে কিনা ভেবে দেখা উচিত। একজন শিক্ষককে দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে যথাসম্ভব আগ্রহী করে তুলতে জানতে হবে। সেক্ষেত্রে রিফাতের শিক্ষক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে ভাইরাল হওয়ার নেশার এটাই প্রমাণ করে। তার এই কর্মকান্ডে কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও মোবাইল বা ফেসবুকের আসক্ত হতে পারে। গতকাল পত্রিকার নিউজে দেখলাম আঁচল ফাউন্ডেশনের জরিপে উঠে এসেছে ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ফেসবুক ইন্টারনেটে আসক্ত। এর জন্য দায়ী কারা.? অভিভাবকের পাশাপাশি স্কুল, মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না করে দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে ভাইরাল হওয়ার নেশায় মেতেছে অতি উৎসাহীরা! তাইতো দিন দিন মোবাইল ফেসবুকে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা। আমাদের সচেতনতার বড়ই অভাব।

এটা ঠিক যে, দেশ অনেক উন্নত হয়েছে। রাস্তা ঘাট, সেতু, ফ্লাইওভার নির্মাণ হয়েছে, কিন্তু মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন হয়নি। বাস্তবতা হচ্ছে, “বন্যা, খরা, ঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ুজনিত ফসলহানিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, উচ্চ জ্বালানির মূল্যের কারণে বাংলাদেশে মানুষ নতুন করে দরিদ্র হচ্ছে”। ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে, পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে গরিবের পাতে আমিষের অভাব রয়েছে। এছাড়াও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব হয়নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়েরা অভিশপ্ত জীবন পার করছে। চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এইতো সেদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো মুক্তা সুলতানা নামের এক তরুণী তার অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত সকল সার্টিফিকেট ফেসবুক লাইভে পোড়ানোর দৃশ্য যা দেখে হতবাক হয়েছি। অবশ্য, তার এই সার্টিফিকেট পোড়ানোর ভিডিও তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর নজরে এলে তাকে চাকরি দিয়েছেন। তাতে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অনেকের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন আবার হাজার হাজার বেকার তরুণ তরুণীরা ক্ষোভে দুঃখে সমলোচনাও করেছেন‌। হাজার হাজার বেকারত্বের মধ্যে একজন হতাশ হয়ে লাইভে এসে সার্টিফিকেট
পোড়ালেই তাকে চাকরি দিতে হবে? এটাকে ভাইরাল হওয়ার নেশার অস্বস্তি প্রতিযোগিতা বলেও অনেকে আখ্যা দিয়েছেন। এই অস্বস্তি প্রতিযোগিতাকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী সাপোর্ট দিয়ে তাকে চাকরি দিয়েছে এমনটাই অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ যুবক অভিযোগ করেছেন। আমিও এটাকে ব্যক্তিগতভাবে সাপোর্ট করতে পারিনি। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ তার নিজ যোগ্যতায় সফল হবে এটাতো স্বাভাবিক। পরোক্ষভাবে বলতে পারি বিবেক-বুদ্ধি বেবিরজিত মানসিক অসুস্থ প্রতিযোগিতার কাজকে সাপোর্ট দিলে যোগ্যতা সম্পন্ন মেধাবী লোকগুলো হতাশাগ্রস্থ হয়ে হারিয়ে যাবে। হারিয়ে যাবে দেশের মেধাবী তরুণ সমাজ।

যদিও সরকার দরিদ্র মোকাবেলা করার জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। দিচ্ছে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী, বিধবা, হিজড়া, শিক্ষা উপবৃত্তি। তাতে কিছুটা হলেও মধ্যবিত্ত হত দরিদ্রের কষ্ট লাঘব হচ্ছে। নতুন দারিদ্র মোকাবিলায় সরকারের নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তাহলে দেশে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। বাংলাদেশ প্রতিনিয়তই উন্নয়ন আর অগ্রগতির নতুন মাইলফলক স্পর্শ করছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশটি নিজেই নিজের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড আর ইতিহাস গড়ে যাচ্ছে।

-লেখকঃ কবি ও সাংবাদিক

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved 2022 © aponnewsbd.com

Design By JPHostBD
error: সাইটের কোন তথ্য কপি করা নিষেধ!!